অনলাইন রিপোর্ট:
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যের বর্তমান লড়াই প্রায় ত্রিশ বছর ধরে জিইয়ে রাখা সমস্যার ফল। এ লড়াই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আজারবাইজানের ভূমি অবৈধভাবে দখলকারী আর্মেনীয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আজারবাইজানীদের অধিকার আদায়ের লড়াই। নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের সমস্যা শুরুহয় উসমানীয় সম্রাজ্য পতনের পরে যখন এ অঞ্চলটি ব্রিটিশরা দখল করে নেয়। পরবর্তীতে এ অঞ্চল চলে যায় বলশেভিকদের অধীনে।
একসময় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান– উভয় দেশই সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। তারপর আজারবাইজানের ভূসীমার মধ্য থেকে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্মেনীয়দের নেতৃত্বে স্বায়ত্ব শাসন দিয়ে দেয় রাশিয়া। তখন থেকেই আজারবাইজানের বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে নতুন জন্ম নেয়া এই দেশটির তখন বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দেশ দুটি স্বাধীন হয়। আজারবাইজানের তুলনামূলক কম শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার ইন্ধনে আর্মেনীয়রা ধীরে ধীরে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের আসেপাশের বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয়। এ নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে বিরোধে জড়িয়ে আছে দুই প্রতিবেশী।
রোববার বিতর্কিত নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে। এই সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হামলা চালায় আজারবাইজান। এর জবাবে আর্মেনিয়ার বাহিনী প্রতিপক্ষের দুটি হেলিকপ্টার, তিনটি ড্রোন ভূপাতিত ও তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে আজারবাইজান বলছে, হামলার শিকার হওয়ার পর তারা পাল্টা হামলা চালিয়ে কয়েকটি গ্রাম তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও ২০ জন আর্মেনীয় সৈন্য হত্যা এবং ডজন খানেক ট্যাংক, কিছু ভারী অস্ত্র ধ্বংসের দাবি করেছে বাকু।
কে কোন পক্ষে?
আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যকার এই লড়াই তুরস্ক এবং রাশিয়াকে আরেকবার মুখোমুখী করেছে। পশ্চিমা চাপ ও ভীতি উপেক্ষা করে তুরস্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিয়ার আরো কাছে আসলেও সিরিয়া এবং লিবিয়াতে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে আছে আঙ্কারা এবং মস্কো।
তুরস্ক এবারে খুব হাঁকডাক দিয়েই আজারবাইজানের পক্ষ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান, তার উপদেষ্টারা, তুর্কি সেনাবাহিনী, দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সহ আপামর জনসাধারণ বাকুর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
আজারবাইজানের সঙ্গে এমনিতেই তুরস্কের জাতিগত মিল এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ক এবং আজারবাইজানকে বলা হয় ‘দুই রাষ্ট্র এক জাতি।’
তুরস্ক এ দেশটিকে প্রকৃতপক্ষেই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। এছাড়াও দেশটি এখন তুরস্কে প্রধান গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ।
অন্যদিকে আর্মেনিয়ার সঙ্গে বৈরীতাও ঐতিহাসিক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্মেনীয়রা উসমানী সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে উভয় পক্ষের লাখ লাখ লোক মারা যায়। আর্মেনীয় ডিয়াস্পোরা সেই ঘটনাকে পুঁজি করে পশ্চিমা দেশগুলোতে তুরস্কের বিরুদ্ধে তথাকথিত গণহত্যার স্বীকৃতি নিতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি দুদেশের সম্পর্ককে এতটাই তিক্ত করছে যে আঙ্কারা বারবার চেষ্টা করেও এটিকে মিষ্টি সম্পর্কে উন্নীত করতে পারেনি।
এছাড়াও নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে তুরস্ক সবসময়ই সোচ্চার ছিল।
অন্যদিকে রাশিয়া সেই সোভিয়েত আমল থেকেই আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার ওপর খবরদারি করে আসছে। দুইও দেশের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক দহরম মহরম। তবে রাশিয়া সবসময়ই আর্মেনিয়াকে আরো বেশি সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে আসছে।



0 Comments